Breaking

Monday 31 December 2018

প্রগতি বিষয়ে বিনয় কুমার সরকারের ধারণা || প্রগতি || সমাজতত্ত্ব বিষয়ক প্রশ্নোত্তর

প্রগতি বলতে বিনয় কুমার সরকার কি বুঝিয়েছেন ||প্রগতি বিষয়ে বিনয় কুমার সরকারের ধারণা :

প্রগতি বিষয়ে বিনয় কুমার সরকারের ধারণা || প্রগতি || সমাজতত্ত্ব বিষয়ক প্রশ্নোত্তর
প্রগতি বিষয়ে বিনয় কুমার সরকারের ধারণা || প্রগতি || সমাজতত্ত্ব বিষয়ক প্রশ্নোত্তর 

প্রগতি বিষয়ে বিনয় কুমার সরকারের ধারণা :

                                                          বিনয় কুমার সরকার এর মতে, প্রগতি হলো ও অমসৃণ পথে পরিচালিত এক চলমান প্রক্রিয়া,যার মাধ্যমে সামাজিক ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা পায়। আর এই চলমানতার কারণেই দ্বন্দ্ব এবং সংগ্রামের সম্ভাবনা বৃদ্ধি এবং কালক্রমে নতুন সামাজিক মূল্যবোধ জন্মলাভ করে ।অর্থাৎ তার মূল বক্তব্য হলো - i) প্রাচীনকাল থেকে সমাজ গতিশীল ;
                                                                                            ii) প্রগতির পথ অমসৃণ এবং 
                                                                                            iii) দ্বন্দ্ব হলো শান্তি প্রতিষ্ঠার মাধ্যম ।আর ভারসাম্যহীনতার রূপান্তরই হলো প্রগতি।

                   তাঁর আগ্রহের বিষয় হলো ভারতকে পাশ্চাত্যের সমকক্ষ করে তোলা ।আধ্যাত্মিকতার কারণে ভারতীয়রা পাশ্চাত্যদের সমকক্ষ হতে পারে না বলে হেগেল হেনরি,মেইন,ম্যাক্সমুলার প্রমুখগণের মন্তব্যকে কটাক্ষ করে তিনি মন্তব্য করেন, শিল্প এবং অর্থনীতির উন্নতির মাধ্যমে ভারতীয়রা নিকট ভবিষ্যতে পাশ্চাত্যের মানসিকতাকে আয়ত্ত করতে পারবে।

                  তাঁর দাবি প্রগতিমূলক পরিবর্তনের প্রতিটি পর্যায়েই শুভ-অশুভের সংগ্রাম চলে যা থেকে মুক্তি পাওয়া অসম্ভব ।ব্যক্তিত্বের বহুত্ববাদী বৈশিষ্ট্যের কারণে জীবনের সব বাধা অতিক্রম করা সম্ভব নয় বলে অনন্ত কাল যাবৎ অসৎ,তামস,মৃত্যু ও অবিদ্যার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে যেতে হয়। আর তাই সমাজের রূপান্তর আসলে ভারসাম্যহীনতারই রূপান্তর,যে কারণে প্রগতির অপর নাম হলো 'সৃজনশীল ভারসাম্যহীনতা'। আর এই ভারসাম্যহীনতার যেমন কোন শেষ নেই তেমনি প্রগতির নির্দিষ্ট কোন লক্ষ্যও নেই।

                 তাঁর মতে,সংগ্রাম এবং প্রগতি সমার্থক। কারণ জীবনের মূল কথাই হল অশুভ এবং স্থিতিশীলতার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে সমাজের রূপান্তর ঘটানো ।যা থেকে নতুন দ্বন্দ্ব এবং ভারসাম্যহীনতার জন্ম হয়। এইরূপ ভারসাম্যহীনতা কে দ্বান্দ্বিক সূত্রাকারে উপস্থাপন করে বলেন প্রগতিই হল 'বাদ' এবং 'প্রতিবাদ'- এর মধ্যেকার চলমান দ্বান্দ্বিক প্রক্রিয়া, যা সম্বাদের জন্ম দেয়। অবশ্য দ্বান্দ্বিক পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটলেও দ্বন্দ্বের ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে যা মার্কস  এবং হেগেলের ধারণা বিরোধী ।

                তাঁর মতে যৌক্তিকতা হলো প্রগতির অন্যতম উপাদান ,কারণ প্রগতির পশ্চাতে কোন ঐশ্বরিক মহিমার প্রভাব নেই,বরণ মানুষের সৃজনশীল প্রতিভাই  ভালো-মন্দের মধ্যেকার দ্বন্দ্বকে সচেতন ভাবে মোকাবিলা করে সমাজ বিকাশের পরবর্তী পর্যায়ে জন্ম দেয়।অবশ্য ইহা আপেক্ষিক কারণ পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি,বাস্তব প্রয়োজন ও স্বার্থের ভিত্তিতে প্রগতির লক্ষ্য নির্ধারিত হয় বলে বর্তমানের লক্ষ্য ভবিষ্যতে বাতিল হতে পারে অর্থাৎ মানুষের প্রত্যাশার ওপর প্রগতির মাপকাঠি নির্ভর করে থাকে। এই প্রসঙ্গে প্রগতির উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য গুলি হল  -
                                                                                                            i) ইহা  হল এক অন্তহীন ধারা,
                                                                                                            ii) এর ওপর নির্দিষ্ট জাতি - গোষ্ঠী বা অঞ্চলের একক প্রভাব থাকে না,
                                                                                                            iii) প্রগতি বৈচিত্র্যপূর্ণ মডেল যুক্ত ।                         ভবিষ্যতে এই মান বৃদ্ধির জন্য কি করা উচিত তা দেখা আবশ্যক ।

                প্রগতির বহুত্ববাদী চরিত্রের ওপর জোর দিলেও ভারত তথা এশিয়ার বৈষয়িক উন্নয়নের জন্য পাশ্চাত্যের বিজ্ঞান ও শিল্পের সাফল্যকে আয়ত্ত করার গুরুত্ব আরোপ করেছেন ।আবার বিশ্ব অর্থনীতির সাম্য সম্বন্ধে রচনাটিতে অর্থনৈতিক পুনর্গঠনে পাশ্চাত্যের মডেল গুলিকে অনুশীলনে জোর দিয়েছেন ।যার কারণ হলো পাশ্চাত্যের সংস্পর্শে এসে এই ভারতীয়রা প্রগতির স্বাদ পেয়েছে,বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ও শিল্পায়নের সাধনায় মনোযোগী হয়েছে। সর্বোপরি ঔপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্তির স্বাদ পেয়েছে।প্রসঙ্গত বলা প্রয়োজন তিনি মার্কিন মডেল গ্রহণে অনেক বেশি আশাবাদী ছিলেন ।

                  এই নীরিখে তাঁর অভিমত হল,সকল সমাজেই প্রগতির বীজ অঙ্কুরিত হয়েছে,যা কোনো না কোনো সময়ে বিকশিত হয়ে উঠবে ।

No comments:

Post a Comment